রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
‘দিনের পর দিন অনির্বাচিত সরকারের হাতে দেশ চালাতে দিতে পারি না’ ট্রাইব্যুনালে প্রধান অভিযুক্তদের বিচার এক বছরের মধ্যে শেষ হবে : চিফ প্রসিকিউটর সাদপন্থী জিয়া বিন কাসিম গ্রেফতার গণহত্যার বিচার করাই আমার প্রধান দায়িত্ব: আসিফ নজরুল সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা সাময়িক: স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিবালয়ে আগুন গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ: রিজভী এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজায় বাসের ধাক্কা, নিহত বেড়ে ৬ ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ আইএসপিআরের ইতিহাস গড়লো নাসা, সূর্যের কাছাকাছি মহাকাশযান এক দিনের ব্যবধানে সিলেটে ‘ভারতীয় খা‌সিয়াদের গু‌লিতে’ আরেকজন নিহত
কাশ্মির নিয়ে ষড়যন্ত্র বুমেরাং হতে পারে

কাশ্মির নিয়ে ষড়যন্ত্র বুমেরাং হতে পারে

ভূস্বর্গ কাশ্মির জ্বলছে। বিশ্বের তথাকথিত বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশের দাবিদার ভারতে চলছে চরম অগণতান্ত্রিক শাসন ও ফ্যাসিবাদ। উগ্র হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) আদর্শধারী নরেন্দ্র মোদি হিটলারের নাৎসি বাহিনীর আদর্শ ধারণ করে ভারতের সংবিধান থেকে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দিয়ে কাশ্মিরকে আরেক ফিলিস্তিন বানানোর নতুন খেলা শুরু করেছেন। ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনিদের ভূমি ও ভূখণ্ড অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে, মোদি সরকারের পরিকল্পনাও হচ্ছে একই রকম। তারা কাশ্মিরের মুসলমানদের তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে সেখানে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নতুন নতুন বসতি গড়তে চায়।

১৯৪০-এর দশকের প্রচারণার সময় ইহুদিবাদী দলগুলো ধনী ইহুদিদের ফিলিস্তিনি ভূমি কেনার জন্য উৎসাহিত করত। ধনী ইহুদিরা পরিকল্পিতভাবে ফিলিস্তিনিদের ভূমি সম্পদ ক্রমান্বয়ে ক্রয় করতে থাকে এবং একপর্যায়ে আরবরা তাদের নিজেদের জমিজমার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। এরপর আরবদের এই ভূমি ও সম্পদ একসময় ইহুদি রাষ্ট্র ইসরাইলে রূপান্তরিত হয়। এখন প্রশ্ন হলো ভারতও কী একই কৌশল প্রয়োগ করে সফল হবে?

আমরা মনে করি, ভারত কাশ্মিরে ইহুদি কৌশল প্রয়োগ করে সফল হবে না। কাশ্মিরি মুসলিমরা ইতোমধ্যেই মোদি সরকারের নাৎসি ও ফ্যাসিবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। কাশ্মিরে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। জনসংখ্যার ৬৫ শতাংশ মুসলিম। মোদি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর কিছু দিনের মধ্যেই সংবিধান থেকে ৩৭০ ও ৩৫-ক ধারা বাতিলের মাধ্যমে কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিয়েছে। মোদি সরকারের এই পদক্ষেপ ভারতীয় সংবিধানেরই লঙ্ঘন। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী এই সিদ্ধান্ত অবৈধ। কাশ্মির বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব ও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিমলা চুক্তিরও বিরোধী মোদি সরকারের এ উদ্যোগ।

কাশ্মিরকে জোরপূর্বক দখলে নেয়ার এ উদ্যোগ সফল করার জন্য ভারত সরকার সেখানে লাখ লাখ সেনা মোতায়েন করেছে। টেলিফোন, ইন্টারনেট, রেডিও টিভি ও গণমাধ্যম বন্ধ করে কাশ্মিরিদের গোটা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। কার্ফু জারি করে পুরো কাশ্মিরকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কার্ফু ভেঙে বিক্ষোভ করলে গুলি করে হত্যা করা হচ্ছে। কাশ্মিরের প্রায় সব বিরোধীদলীয় নেতাকে গ্রেফতার করে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। মোদি সরকারের বর্বর পদক্ষেপের পর ভারতীয় বাহিনী কাশ্মিরের জনগণের ওপর নির্যাতন চালাচ্ছে বলে বিবিসি জানিয়েছে। গ্রামবাসী বিবিসিকে জানিয়েছে তাদেরকে লাঠি দিয়ে পেটানো হচ্ছে এবং বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়েছে। অনেক গ্রামের বাসিন্দারাই বিবিসির কাছে তাদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রমাণ হিসেবে শরীরে ক্ষতস্থান দেখিয়েছেন। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর ভারত সরকার কাশ্মিরে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে। কাশ্মিরের রাজনৈতিক নেতা, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে।

কাশ্মির ইস্যু নিয়ে মুসলিম বিশ্ব সোচ্চার নয়- এটা সত্যিই দুঃখজনক। কাশ্মির ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার কোনো দ্বিপক্ষীয় বিষয় নয়। ভারত জম্মু ও কাশ্মিরকে নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করলেও ইতিহাস সে কথাকে সমর্থন করে না। প্রকৃত সত্য হলো, কাশ্মির অতীতে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র ছিল। কিন্তু রাজা হরি সিংয়ের বিশ্বাসঘাতকতার কারণেই কাশ্মির ভারতীয় ইউনিয়নভুক্ত হয়। কিন্তু কাশ্মিরের মালিক সেখানকার জনগণ- রাজা হরি সিং নয়। তাই জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মিরে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তাব পাস করেছিল। পাকিস্তান ও ভারত স্বাধীনতা লাভ করার সময়েই কাশ্মির একটি বিরোধপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিগণিত হয়। কাশ্মির নিয়ে দুই দেশের মধ্যে বিরোধের কারণেই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫ ও ১৯৯৯ সালে তিনটি যুদ্ধ হয়েছে।

১৯৪৮ সালে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ কাশ্মিরের ভাগ্য নির্ধারণের জন্য গণভোট অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ৪৭ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণ করেছিল। ভারত প্রথমে এই প্রস্তাবে সম্মত হলেও পরে এ প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করে।

কারণ ভারত জানত গণভোট ভারত সরকারের পক্ষে যাবে না। তাই বিরোধপূর্ণ কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে ভারতীয় ইউনিয়নভুক্ত রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৪৯ সালের ১৭ অক্টোবর কাশ্মিরকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে ৩৭০ অনুচ্ছেদটি ভারতের সংবিধান সংযোজন করা হয়। ১৯৫৪ সালে ওই অনুচ্ছেদের সাথে ৩৫-এ ধারা সংযুক্ত করা হয়।

এই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে কাশ্মির স্বায়ত্তশাসন ভোগ করত। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মিরকে নিজেদের সংবিধান ও একটি আলাদা পতাকা রাখার স্বাধীনতা দেয়া হয়। আর পররাষ্ট্র প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ছাড়া অন্যসব ক্ষেত্রে স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল। মোদি সরকার ৩৭০ ধারা বাতিল না করা পর্যন্ত কাশ্মিরের জনগণ এসব সুবিধা ভোগ করত।

কাশ্মিরকে ভারতের অংশ নয় এ সংক্রান্ত জম্মু ও কাশ্মির হাইকোর্টের একটি ঐতিহাসিক রায়ও আছে। ২০১৫ সালে দেয়া হইকোর্টের ওই রায়ে বলা হয়: ‘Kashmir is not part of India and thus cannot be amalgamate in India. Kashmir is an autonomous area.’ অর্থাৎ ওই আদেশে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল বা সংশোধনযোগ্য নয়’ মর্মে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
কাশ্মির ইস্যুতে পাকিস্তান সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। ওআইসি, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও সৌদি আরবসহ কয়েকটি মুসলিম দেশ উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে। নিঃসন্দেহে এটি একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু-দ্বিপক্ষীয় নয়। চীন, ইরান, তুরস্ক ও কাশ্মিরি জনগণ এবং পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে।

কাশ্মির নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তানের বিরোধের বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় মনোযোগ না দিলে পরমাণুযুদ্ধ শুরু হতে পারে বলেও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সতর্ক করে দিয়েছেন। নিউ ইয়র্ক টাইমসে লেখা এক নিবন্ধে তিনি এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। আমরা জানি দুটো দেশই পরমাণু শক্তির অধিকারী। যুদ্ধ কারো জন্য কল্যাণকর নয় এবং যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। মোদির উগ্র হিন্দুত্ববাদী উচ্চাভিলাষ প্রকারান্তরে ভারতের জন্য বুমেরাং হতে পারে। তাই ভারতের শান্তিপ্রিয় জনগণসহ গোটা বিশ্বকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877